ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ , ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে হেরে শতবর্ষের লজ্জায় লিভারপুল ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন সহজভাবে প্রকাশের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে, হঠাৎ আক্রমণ চলে আসতে পারে-প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে-প্রেস সচিব ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে-ফখরুল ন্যায়বিচারের দাবিতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়াবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট গ্রুপ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ অর্ধশত শিক্ষক আহত ১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল নির্বাচন নাও হতে পারে, জুলাই সনদ আগে হতে হবে-ডা. তাহের কমিশনের সুপারিশ বাদ দিয়ে দুদক সংশোধন খসড়া অনুমোদনে টিআইবির উদ্বেগ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই- নাহিদ ইসলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফের আলোচনায় ডিজিটাল লেনদেনে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের সম্ভাবনা বিএনপিতে অস্থিরতা সারাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে সমাজসেবা কার্যালয় কাজ করছে : ধর্ম উপদেষ্টা ১৪ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অতিরিক্ত এসপি বরখাস্ত ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের কর্মকাণ্ডে বিএনপি হতাশ- সালাহউদ্দিন নারীর অদম্য সাহসেই হবে জলবায়ু সহনশীল বাংলাদেশÑ পরিবেশ উপদেষ্টা ১৭৫% ক্যাশ ডিভিডেন্ডে সন্তুষ্ট বিনিয়োগকারীরা প্রেমিকের পরামর্শে স্বামীকে হত্যা নববধূ আটক
* আসন ছাড় নিয়ে তৃণমূলে ক্রমাগত বাড়ছে অসন্তোষ

বিএনপিতে অস্থিরতা

  • আপলোড সময় : ৩০-১০-২০২৫ ০৪:৪৩:১৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩০-১০-২০২৫ ০৪:৪৩:১৯ অপরাহ্ন
বিএনপিতে অস্থিরতা
* দলে প্রভাব বিস্তার ও গ্রুপভিত্তিক তদবিরের রাজনীতিতে ক্ষোভ * এলাকার বাইরের প্রার্থীদের অগ্রাধীকার দেয়ায় উপেক্ষার অভিযোগ নেতাদের * আসনের ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত হতে চায় বিএনপির মিত্ররা * গণভোটের সময় নিয়ে দুই মেরুতে বিএনপি-জামায়াত আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মিত্র দলগুলোর কিছু নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও পেশাজীবীরা ‘সম্ভাব্য প্রার্থী’ হিসেবে আলোচনায় আসায় আসনভিত্তিক নেতৃত্ব নিয়ে দলের ভেতরেই তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। দীর্ঘদিন মাঠে থেকে সংগঠন ধরে রাখা স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, এলাকার বাইরের প্রার্থী ও মিত্র দলের প্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার দিয়ে তৃণমূল নেতাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এর পেছনে কাজ করছে দলে প্রভাব বিস্তার ও গ্রুপভিত্তিক তদবিরের রাজনীতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানা বিএনপির একজন নেতা বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা এখানে সংগঠন টিকিয়ে রেখেছি। এখন বাইরে থেকে কেউ এসে নেতৃত্ব নেবে এটা মেনে নেওয়া কঠিন। আরেকজন নেতা বলেন, মাঠের বাস্তবতা না বুঝে প্রার্থী নির্ধারণ করা হলে তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া সামলানো কঠিন হবে। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দলীয় স্বার্থই আমাদের মুখ্য বিষয়। মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, তবে তৃণমূলকে উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকার অন্তত দশটি আসনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মিত্র দল বা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সম্ভাব্য প্রার্থী করা নিয়ে আলোচনা চলছে। ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে সংগঠন টিকিয়ে রেখেছেন। তবে সম্প্রতি মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি আমিনুল হক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে পরিচয় করানোর পর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সদস্য আলমগীর হোসেন লাবু বলেন, ১৩ বছর ধরে আমরা আবদুস সালামের নেতৃত্বে কাজ করছি। এখন বাইরে থেকে কাউকে আনা হলে তা কর্মীদের জন্য অন্যায্য হবে। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল ভুঁইয়া সোহেল বলেন, দলের বাইরে কাউকে প্রার্থী করা হলে তৃণমূল হতাশ হবে, ভোটাররাও মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, দলের পক্ষ থেকে ববি হাজ্জাজের জন্য কাজ করার কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই চূড়ান্ত। ঢাকা-৬ : বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন ও মহানগর দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পাশাপাশি গণফোরামের সুব্রত চৌধুরীর নাম আলোচনায়। ঢাকা-৭ : বিএনপির মীর নেওয়াজ আলী, হামিদুর রহমান হামিদ ও যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। মিত্র দলের প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা মামুনুল হকের নাম শোনা যাচ্ছে। ঢাকা-৮ : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিপরীতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আছেন আলোচনায়। ঢাকা-১০ : বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম ও নির্বাহী কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম রবির সঙ্গে আলোচনায় আছেন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ঢাকা-১১ : বিএনপির ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুমের পাশাপাশি আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ঢাকা-১২ : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেল ও নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম নীরব। অন্যদিকে, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি ও তাসলিমা আখতার। ঢাকা-১৪ : বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এ সিদ্দিক সাজুর বিপরীতে মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি। ঢাকা-১৭ : বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কামাল জামান মোল্লার বিপরীতে মিত্র দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। ঢাকা-১৮ : বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এস এম জাহাঙ্গীর, জেএসডির তানিয়া রব ও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাও রয়েছেন আলোচনায়। ঝিনাইদহ-২ সংসদীয় আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির জেলা সভাপতি আব্দুল মজিদ ও গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন। জানতে চাইলে আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে আব্দুল মজিদ বলেন, দল যদি রাশেদকে মনোনয়ন দেয়, এ আসন হারাবে। রাশেদ এখানে সক্রিয় নন। তার তেমন কোনো স্থানীয় সমর্থকও নেই। তিনি বলেন, স্থানীয় নেতাদের মতে, রাশেদ খাঁন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে পরিচিত হলেও ঝিনাইদহে বিএনপির সাংগঠনিক বাস্তবতা সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। স্থানীয়রা চান এ আসনে ‘বাইরের প্রার্থী’ নয়, স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত নেতাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক। পটুয়াখালী-৩ সংসদীয় আসন নিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মামুন ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে হাসান মামুন বলেন, নুরকে ছেড়ে দিলে বিএনপি এ আসন হারাবে। স্থানীয়রা বিএনপির প্রার্থী চায়, কোনো মিত্র দলের কাউকে নয়। তৃণমূলের নেতারা জানান, বিএনপির দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক ঘাঁটি এ আসনে নতুন মুখ এলে কর্মীদের মনোবল দুর্বল হবে। ফলে স্থানীয় প্রার্থী ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে দলীয় ঐক্যে ভাঙন ধরতে পারে। সূত্র জানায়, বিএনপি অন্তত ৫০ থেকে ৭০টি আসনে মিত্রদের ছাড় দিতে পারে। তবে এসব আসনে দীর্ঘদিন কাজ করা স্থানীয় নেতারা এখন মনোনয়ন হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। বনানী থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ঈমান হোসেন নূর ইমন বলেন, আমরা যারা জেল-জুলুমের শিকার, তারা শুধু ধানের শীষে ভোট দিতে চাই। বাইরে থেকে প্রার্থী এলে মনোবল ভেঙে যাবে। ঢাকা-১২ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাইফুল ইসলাম বলেন, দল সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে, আর দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, দল যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেটাই মেনে নেবো। তবে তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পেলে তাদের মন খারাপ হবে। বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন, অতীতে মিত্র দলের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় দল বিব্রত হয়েছিল। যেমন মিরপুরে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ধানের শীষে ৬১ হাজার ভোট পান। গণফোরামের সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান ধানের শীষে জয়ী হলেও পরে দল থেকে সরে যান। তাদের মতে, ঢাকা শহরের আসনগুলো বিএনপির রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। এখানে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন বা বিতর্কিত প্রার্থী আনা হলে তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আওয়ামী লীগও জনপ্রিয়তার চেয়ে তারকা, আমলা বা বাইরের লোক দিয়ে এমপি বানিয়ে ভুগেছে। বিএনপির সেই ভুল না করা উচিত। তৃণমূলের মতে, মিত্রদের সমন্বয় অবশ্যই জরুরি, তবে স্থানীয় বাস্তবতা উপেক্ষা করলে ঐক্যের এ কৌশলই উল্টো অস্বস্তির ফাঁদে পরিণত হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নভেম্বর মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে এককপ্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হবে। শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যারা মনোনয়ন পাবেন না, তাদেরও যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, মিত্রদের আসন বণ্টনের বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। এখন আবার সংশোধিত আরপিওর খসড়া অনুযায়ী, জোট শরিকদের নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। এর ফলে এখন বিএনপিকে আরও পর্যালোচনা, অনেক চিন্তাভাবনা করে এ কাজটা করতে হবে। বিএনপি চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে গ্রিন সিগন্যাল (সবুজ সংকেত) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি মিত্রদের আসন বণ্টন নিয়েও বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী অধিকাংশ মিত্র এরই মধ্যে জমা দিয়েছে তাদের প্রার্থী তালিকা। এখন পর্যন্ত বিএনপির কাছে ১০৩ জনের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে যুগপতের শরিকরা। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোট ২১ জন, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯ জন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ১৯ জন, এলডিপি ১৩ জন, গণফোরাম ১৬ জন, এনডিএম ১০ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি পাঁচজন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ছয়জন এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বিপিপি চারজনের প্রার্থী তালিকা দিয়েছে। তবে তালিকা জমা নেওয়ার পর শরিকদের কারও সঙ্গে এখনো বসেনি বিএনপি। এদিকে এখনো প্রার্থী তালিকা জমা না দিলেও এটা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ছয় দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ এবং গণঅধিকার পরিষদের আলোচনা চলছে। শিগগির গণতন্ত্র মঞ্চ অর্ধশতাধিক এবং গণঅধিকার পরিষদ ৩০ জনের তালিকা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, মিত্রদের ১০৩ জনের প্রার্থী তালিকা এখন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে রয়েছে। তিনি এই তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মিত্র দলের প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা কেমন, প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দলের প্রার্থী কারা, কে কেমন ফল করতে পারে এসব বিবেচনা করা হচ্ছে। বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়াও। এখানে বিধান করা হয়েছে যে, ‘নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।’ যদিও সুষ্ঠু রাজনীতি ও নির্বাচনের স্বার্থে এটা পুনর্বিবেচনা করতে শিগগির ইসিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেবে বিএনপি। বিএনপি ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে মিত্রদের ৫৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ তৎকালীন ২০ দলীয় জোটকে ৪০টি আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ছেড়েছিল ১৯টি আসন। নিবন্ধন না থাকায় তখন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করেছিলেন জামায়াতের প্রার্থীরা। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় আগামী নির্বাচনে জামায়াতকেই বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দুটি দলই এবার তাদের নেতৃত্বে পৃথক নির্বাচনী জোট গঠনে তৎপরতা চালাচ্ছে। দলীয় সূত্রমতে, শরিকদের জন্য বিএনপি এবার কতটি আসন ছাড়বে, সেটি মূলত নির্ভর করছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোটের পরিধির ওপর। জামায়াতের বাইরে থাকা অন্য ইসলামী দল ও আলেমদের পাশাপাশি বামপন্থি কিছু দলকেও পাশে চায় বিএনপি। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গেও রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে তাদের। জানা গেছে, বিএনপির আসন ছাড়ের সংখ্যা এবার পঞ্চাশের আশপাশে থাকবে। অবশ্য জোটের পরিসর বড় হলে আসন ছাড়ের সংখ্যাও বাড়তে পারে। জোটের যেসব প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট এলাকায় শক্ত অবস্থান আছে, বিজয়ী হয়ে আসার মতো সক্ষমতা রয়েছে ঢাকাসহ দেশের এমন বিভিন্ন জায়গায় আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্য দেবে বিএনপি। তবে মিত্রদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির কেন্দ্র কিংবা দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বা দায়িত্বশীল নেতাদের জানিয়ে না দেওয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জোট নেতারা জানিয়েছেন। ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বিএনপি মিত্রদের মধ্যে যাদের আসন ছাড় দিতে চায়, সেসব আসনে যত দ্রুত সম্ভব জোটের প্রার্থী ঘোষণা করে দিলে প্রার্থীদের জন্য সুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে তারা পূর্ণ উদ্যমে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়তে পারবেন। অপরদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দুটি বিকল্প সুপারিশ করলেও গণভোটের সময় নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি। এদিকে গণভোটের সময় নিয়ে দুই মেরুতে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প সুপারিশ দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। দুটি প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয় একই। দুই সুপারিশেই জুলাই জাতীয় সনদে সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি, এরপর সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি নেওয়ার জন্য গণভোট নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গণভোটের সময় নিয়ে সুপারিশে বলা হয়, ‘উক্ত (জুলাই জাতীয় সনদ) বাস্তবায়ন আদেশ জারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা উক্ত নির্বাচনের দিন উক্ত আদেশ অনুসারে গণভোট অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।’ পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে গণভোটের সময় নিয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ না করার কারণ হিসেবে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেইনি। যেহেতু কমিশনের পক্ষ থেকে লজিস্টিক্যালি এবং অন্যান্য কারণে এটা বোঝা সম্ভব নয় এখন থেকে ৯০ দিন পর নাকি ৩০ দিন পর গণভোট করা যাবে। কমিশনের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও প্রস্তুতির বিষয়গুলো জানা নাই। সে জন্য আমরা বলেছি, এটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আরও বলেন, আজকেও সরকারকে বলে এসেছি আপনারা নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞাসা করুন, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে বলুন। কারণ, এই কাজটা আসলে নির্বাচন কমিশনের। এদিকে গত ৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দল একমত হলেও এখন পর্যন্ত গণভোটের সময় নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দলগুলো। বিশেষ করে প্রধান দুই দল বিএনপি এবং জামায়াত। শুরু থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট চাচ্ছে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বর মাসে আলাদা গণভোট চায়। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর পুরো আলোচনায় বিএনপির অবস্থান ছিল গণভোট আর নির্বাচন একই দিনে হবে। দুটো ব্যালটের মাধ্যমে। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। নতুন করে এই বিষয়কে সামনে আনার কোনো সুযোগ নেই। সেটা যেই বলুক, যারাই প্রতিবেদন দিক, সেটা তাদের সমস্যা। এটা বিএনপির সমস্যা না। এই ব্যাপারে আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনকে ১৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এসব সুপারিশে জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বর মাসে গণভোট চেয়েছে দলটি। বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গণভোটের সময় নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১৮ দফার মধ্যে গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের আগে করতে হবে এবং সেটা আগামী নভেম্বরেই এই নির্বাচনটা সম্পন্ন করতে হবে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, একই দিনে ভোট হলে নির্বাচন কেন্দ্রে সহিংসতা হতে পারে, দুই-চারটা কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনে প্রতীক, প্রার্থীর দ্বন্দ্বে ভোট বন্ধ হলে গণভোটের দশাটা কী হবে? একই দিনেই তো হবে, একই ভেন্যুতেই হবে। ভোট কাস্টিং কমে যাবে। মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, জাতীয় সনদ তৈরি হচ্ছে, জুলাই জাতীয় সনদে সেসব বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোকে পরিবর্তন করে যে সংস্কারগুলোর ব্যাপারে আমরা ঐকমত্য হয়েছি, জাতিকে সেটা জানতে হবে। জানার পরেই না তারা ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোট দেবে। যদি একই দিনে ভোট হয়, তাহলে ভোটারও জানতে পারল না। সে জন্য আমরা বলেছি সংস্কার ও জাতীয় সনদের বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনকে পাবলিক করতে হবে। ওয়েবসাইটে দেবেন, জনগণ জানবে, ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেবেন। সেটার জন্য নভেম্বরই উপযুক্ত সময়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ অর্ধশত শিক্ষক আহত

জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ অর্ধশত শিক্ষক আহত